পিরামিড কি? পিরামিড তৈরির আসল রহস্য।

 পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের একটি হলো পিরামিড। মিশরে অবস্থিত প্রাচীন এই স্থাপত্য মিসরকে সারাবিশ্বে পরিচিতি এনে দিয়েছে। যুগ যুগ ধরে এর রহস্য মানুষকে কাছে টেনেছে বারবার। যেখানে সকল ধরণের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেও বর্তমান যুগে এত বড় স্থাপনা নির্মাণ এক বিশাল চ্যালেঞ্জ, সেখানে প্রাচীন যুগে কিভাবে এমন স্থাপনা তৈরি হলো! এ নিয়ে কৌতূহলের অন্ত নেই মানুষের। চলুন জেনে নেই কারা, কীভাবে তৈরি করেছিলো এই রহস্যময় পিরামিড।

পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের একটি হলো পিরামিড।

প্রাচীন মিসর শাসন করতো ফিরাউনরা। সাধারণত ধারণা করা হয়, মৃত্যুর পর ফেরাউনদের সমাধী দেয়ার জন্যই পিরামিড নির্মাণ করা হতো। মিশরীয়রা ছিলো কুসংস্কারাচ্ছন্ন। অন্যান্য বিষয়ের মতো মৃত্যু নিয়েও নানা কুসংস্কার ছিল তাদের মধ্যে। তারা বিশ্বাস করতো মানুষ মারা গেলেই জীবন শেষ হয়ে যায় না, বরং এরপরও জীবন আছে।


মূলত, মৃত্যুর পরের জীবনকে উপভোগ করার জন্যই ফারাওরা পিরামিড তৈরি করত। তারা পিরামিডকে পুনর্জন্মের প্রবেশদ্বার হিসেবে মনে করতো। দেহ যাতে পঁচে না যায় এজন্য সেটিকে মমি করে পিরামিডে রাখা হত। এছাড়া মমির সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য-দ্রব্য, মূল্যবান অলংকার, দেবতাদের মূর্তি, পোষা প্রাণী বা পাখিও দেওয়া হতো। অর্থাৎ বিলাসবহুল জীবনযাপনের সব উপকরণই দেওয়া হতো।


মিসরে ছোট বড় মিলিয়ে সর্বমোট ৭৫টি পিরামিড আছে। প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার অনেক কিছুই এসব স্থাপনার মধ্যে লিখিত রয়েছে। প্রাচীন এই স্থাপনা নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছিল বিশাল বিশাল সব পাথর খণ্ড। পাথরের সঙ্গে পাথর জোড়া দিয়ে তৈরি করা হতো পিরামিড।


পিরামিড কি এলিয়েনদের তৈরি

পাথর খণ্ডের এক একটির ওজন ছিল প্রায় ৬০ টনের মতে। আর এগুলোর দৈর্ঘ্য ছিল ৩০ থেকে ৪০ ফুটের মতো। এসব পাথর সংগ্রহ করা হয়েছিল দূর-দুরান্তের পাহাড় থেকে। কিন্তু পিরামিড যে সময় কালে তৈরি হয়েছিল তখন কোনো ধরনের চাকা আবিষ্কার হয় নি। তাহলে তারা ওই ভারি পাথরগুলোকে কিভাবে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যেত, আর কিভাবে কেটে সঠিক আকার দিয়ে পিরামিড বানালো? 


এসব রহস্য নিয়ে ভাবতে ভাবতে মানুষ অনেক তত্ত্বের জন্ম দিয়েছে। এর মাঝে সবচাইতে জনপ্রিয়টি হলো ভিনগ্রহী প্রাণী তত্ত্ব। মানুষের ধারণা, ভিনগ্রহের প্রাণীরা এসে এসব পাথর এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে এসেছে।


এ ধারণার পেছনে কিছু কারণও আছে। আর তা হলো, পিরামিডগুলোর সাথে আকাশের নক্ষত্রের এক বিশাল সম্পর্ক আছে। আকাশে একটি ওরাইন বেল্ট আছে যেখানে তিনটি তারা আছে- Alnitak, Alnilam, Mintaka। এই তিন তারা পিরামিডের উপর থেকে শ্রেণীবদ্ধ ভাবে দেখা যায়।


পিরামিড রহস্য আজও অজানা

এমন শ্রেণীবিন্যাস দেখে ধারণা করা হয় ওই সময় পৃথিবীতে এলিয়েন এসেছিলো এবং তাদের সাথে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে এসেছিলো। অনেক বিজ্ঞানীদের মতে এই এলিয়েনগুলো ওই তিন তারাতেই থাকে।


আবার কেউ কেউ ধারণা করেন বালির উপর পানি ঢেলে বালিকে পিচ্ছিল করে বিশালাকার পাথরগুলোকে টেনে আনা হতো। প্রত্নতাত্ত্বিকদের দাবি, নীল নদ দিয়ে এই বিশালাকার পাথর বহন করে নিয়ে আসতে কাজ করেছিলেন হাজার হাজার প্রশিক্ষিত শ্রমিক।


পাথর পরিবহনে ব্যবহার করা কিছু নৌকা ও তাতে ব্যবহৃত দড়ির সন্ধানও তারা পেয়েছেন। সেগুলোর অবস্থা এখনো অনেক ভালো। তবে অনেক প্রত্নতাত্ত্বিকরা এ তত্ত্ব মানতে নারাজ। তাদের দাবী, বিশালাকার পাথর নদীপথে আনা ওই সময় সম্ভব ছিল না।


গ্রিক দার্শনিক হেরোডোটাসের বর্ণনা অনুসারে হাজার হাজার ক্রীতদাসদের দিয়ে তৈরি করা হয়েছিলো পিরামিডগুলো। তবে তাঁর ধারণাটি ভুল প্রমাণিত হয় যখন পিরামিড নির্মাতাদের সমাধি খুঁজে পাওয়া যায় গিজার পিরামিডের পাশে। সে হিসেবে বলা যায়, পিরামিডের প্রস্তুতকারকেরা দক্ষ নির্মাতা ছিলেন, যাদেরকে খুব সম্ভবত আশেপাশের এলাকা থেকে সংগ্রহ করা হতো।


এসব তত্ত্বগুলো সবই ধারণার উপর ভিত্তি করে। মানুষের কল্পনাশক্তি একের পর এক জন্ম দিয়েছে ধারণার। আসল তথ্য আজও সকলের নাগালের বাইরে। কোনো একদিন সে অজানা রহস্যের সমাধান মিলবে এমনটাই প্রত্যাশা সবার।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url