স্টারলিংক কি ? স্টারলিংক কিভাবে কাজ করে?

 রাতের আকাশে বিন্দু বিন্দু আলোর লম্বা একটি সারি আকাশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে যেতে দেখেছেন অনেকেই। সরাসরি না দেখলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যানে এমন ছবি হয়তো অনেকের চোখেই পড়েছে। মূলত এটি হলো স্টারলিংক স্যাটেলাইট এর লম্বা বহর, যাকে বলা হয় 'স্টারলিংক স্যাটেলাইট ট্রেন'। কিন্তু কি এই স্টারলিংক? আর কিভাবেই বা কাজ করে এটি, তা অনেকেরই অজানা।

স্টারলিংক কিভাবে কাজ করে?

মূলত, বিশ্বের যে কোনও জায়গায় কম খরচে, উচ্চ-গতির ইন্টারনেট পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ায় এই পরিষেবার মূল উদ্দেশ্য। ২০১৫ সালের দিকে এই স্টারলিংক ইন্টারনেট তৈরি করে পৃথিবীর অন্যতম ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্কের স্পেসএক্স কোম্পানী।


এরপর ২০১৮ সালে এই প্রকল্পের জন্য প্রাথমিক প্রোটোটাইপ স্যাটেলাইটগুলো কক্ষপথে চালু করা হয়েছিল। এর মাধ্যমে, ইলন মাস্ক পুরো পৃথিবীকে তার স্যাটেলাইট দিয়ে ঘিরে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছেন। মোট ৪২ হাজার স্যাটেলাইটের এক জাল তৈরি করছেন তিনি।


এভাবে ছোট ছোট স্যাটেলাইটের বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে পুরো বিশ্বে উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা পৌছে দিচ্ছে এই স্টারলিংক। আর স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা দেওয়ায় এই প্রজেক্টের নাম দেওয়া হয়েছে ‘স্টারলিংক প্রজেক্ট’।


স্টারলিংকের ইন্টারনেট পরিষেবার গতি খুব দ্রুত। এটি প্রতি সেকেন্ডে ৫০ থেকে ১৫০ মেগাবিট পর্যন্ত গতি দিতে পারে। পাশাপাশি একই সময়ে এটি আবার আবহাওয়ার উপরও নির্ভর করে, অর্থাৎ খারাপ আবহাওয়ায় এর গতি কমতে পারে। আবার একই সময়ে এটি পরিষ্কার আকাশে গতি বাড়াতে পারে।


উল্লেখ্য, স্টারলিংক এর কাজ করার পদ্ধতি অনেক চমকপ্রদ। স্টারলিংক মূলত স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সরবরাহ করে। তাই এর সিগন্যাল রিসিভ করতে অ্যান্টেনার প্রয়োজন হবে। অনেকটা ডিশের ছাতার মতো। তবে আকারে এটি তার চেয়ে ছোট। এই অ্যানটেনা স্যাটেলাইটের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে। ওই অ্যানটেনা থেকে একটি ক্যাবল গ্রাহকের ঘরে রাখা স্টারলিঙ্কের ওয়াইফাই রাউটারে লাগিয়ে ইন্টারনেট উপভোগ করা যায়।


এভাবে পৃথিবীর যে কোন স্থানে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া যাবে। এমনকি অ্যামাজন জঙ্গলেও ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া যাবে। ফলে পুরো পৃথিবী উচ্চগতির ইন্টারনেটের আওতায় আসবে।


এদিকে, বাজারের প্রচলিত ইন্টারনেট সেবাদাতা কোম্পানির প্যাকেজের সঙ্গে তুলনা করলে মোটেই সস্তা নয় স্টারলিংকের সেবা। সাধারণত উচ্চ গতির ইন্টারনেট সেবা পেতে প্রাথমিকভাবে গ্রাহককে খরচ করতে হয় ৪৯৯ মার্কিন ডলার। এরপর প্রতি মাসে ৯৯ ডলার করে গুণতে হবে এর ব্যবহারকারীকে।


তবে, ‘উন্নত বিশ্বের’ দেশগুলোতে ৯০ শতাংশের বেশি বাসাবাড়িতে দ্রুত গতির ইন্টারনেট সংযোগ আছে। সেক্ষেত্রে ‘গরীব’ দেশগুলোতে চাহিদা বেশি থাকলেও তার সঙ্গে স্টারলিংকের সেবার অসামঞ্জস্যতা চোখে পড়ার মতোই।


প্রসঙ্গত, ২০২১ সাল পর্যন্ত কক্ষপথে ১৫০০ টিরও বেশি Starlink স্যাটেলাইট যুক্ত করা হয়েছে। SpaceX আরও অনেক স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য ক্রমাগত কাজ করে যাচ্ছে। তারা আরো Ground Station Install করে Starlink এর ইন্টারনেট পরিষেবাকে আরও উন্নত করতে পারে। 


ইলন মাস্কও দাবি করেছেন যে আগামী সময়ে স্টারলিংক ইন্টারনেটের গতি 300Mbps পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যাবে। ফলে আগামী বছরগুলোতে ১২,০০০ টিরও বেশি উপগ্রহে পৌঁছানোর লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এই টেক জায়ান্ট কোম্পানিটি।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url