দেশ পরিচিতি: ভুটান
দক্ষিণ এশিয়ার ছোট্ট একটি রাজতান্ত্রিক দেশ ভুটান। ৪৬,৫০০ বর্গকিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট এ দেশের জনসংখ্যা প্রায় নয় লাখ। রাষ্ট্রধর্ম বৌদ্ধ। কৃষি নির্ভর এ দেশটি অর্থনৈতিকভাবে খুব একটা সমৃদ্ধ না হলেও, নম্রতা, ভদ্রতা আর শান্তির প্রতীক হিসেবে সারাবিশ্বের কাছে পরিচিত।
ভূটানিরা নিজেদেরকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী জাতি বলে দাবি করেন! এর পেছনে অবশ্য বেশকিছু কারণও আছে। দেশটিতে এমন কিছু আইন কানুন আছে, যা দেশটির মানুষদের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য উপভোগ করার সুযোগ দেয়। চলুন জেনে নেই ভূটানিদের সুখের রহস্য!
ভূটানে নারীরা বেশ সম্মান পান। দেশটিতে নারী-পুরুষের ভেদাভেদ নেই বললেই চলে। নারীরা পুরুষদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যান। নারীদেরই ঘর কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করতে দেখা যায়। এমনকি জমি-জমা ও সম্পত্তির বণ্টনের ক্ষেত্রেও বড় অংশটা পরিবারের বড় মেয়েকে দেওয়া হয়।
ভূটান পৃথিবীর একমাত্র দেশ, যেখানে কোন ট্রাফিক লাইট ব্যবহার করা হয় না। তবে, এরজন্য মানুষের কোনো সমস্যা হয় না। ট্রাফিক পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ চৌরাস্তা গুলোর মাঝখানে নির্মিত ট্রাফিক বক্সে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করে। সেখানে নেই কোনো যানজট। কোনো দুর্ঘটনাও ঘটে না রাস্তাঘাটে। এমনকি গাড়িতে কেউ হর্নও বাজায় না। রাস্তা পারাপারের সময় গাড়ি থেমে যায়।
ভূটানিদের বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে সুখী মানুষ। দেশটির রাজা থেকে সাধারণ মানুষের একটাই উদ্দেশ্য, আর তা হলো হাসি খুশি থাকা। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, দেশটিতে মানুষের মানসিক শান্তির দেখাশোনা করার জন্য 'জাতীয় সুখ কমিটি' আছে!
২০০৮ সালে গঠিত এই কমিটির কাজ হলো, দেশের মানুষ কতটা সুখী সেটা যাচাই করা। এমনকি সেখানকার রাষ্ট্র ব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীসভা রয়েছে, যার নাম ‘মিনিস্ট্রি অব হ্যাপিনেস’। পৃথিবীর আর কোনো দেশে এমন নজির নেই। জনগণের সামগ্রিক সুখের গড় হিসাব, নির্ণয় করে তারা। দেশটিতে অসুখী মানুষের সংখ্যা মাত্র ৮ শতাংশ।
ভূটানে রাস্তায় কোনো গৃহহীন লোক নেই। কেউ যদি কোনো কারণে নিজের বাড়ি-ঘর হারান, তাহলে তিনি রাজার কাছে চলে যান। রাজা নিজেই তাকে চাষাবাদ ও ঘর করার জন্য জমি দিয়ে দেন।
এমনকি দেশটির সকল নাগরিকদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবাও নিশ্চিত করে ভূটান সরকার। যা অনেক উন্নত দেশেও দেখা যায় না। আধুনিক মেডিকেল ও প্রাচীন আয়ুর্বেদিক– এই দুই উপায়েই সেখানে চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। কে কোন চিকিৎসা নেবেন, সেটা রোগী নিজেই ঠিক করে নিতে পারেন।
আমাদের দেশের বেশিরভাগ খাবারই যেখানে ফরমালিন যুক্ত, সেখানে ভূটানে কোনো ফরমালিন যুক্ত খাবারের নজির নেই। সেখানে রাসায়নিক যুক্ত খাদ্যপণ্য আমদানি করা আইনগতভাবে নিষিদ্ধ। তারা যেসব কিছু খায় বা ব্যবহার করে, তার সবকিছুই সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে, দেশের ভেতরেই চাষ করা হয়।
জীবজন্তুর প্রতি ভূটানিদের রয়েছে অগাধ ভালবাসা। দেশটির অধিকাংশ বাড়ি গুলোই ৩ তলা বিশিষ্ট হয়ে থাকে। যার নিচতলায় বাস করে গৃহপালিত প্রাণী, দ্বিতীয় তলায় মানুষ ও তৃতীয় তলায় রাখা হয় শস্যদানা ও খড়কুটো।
দেশটিতে বিয়ের রীতিও অদ্ভুত। সেখানে বিয়ের পর পুরুষরা যায় শ্বশুরবাড়ি। এরপর যখন তাঁদের যথেষ্ট অর্থকড়ি হয়, তখন তাঁরা আলাদা থাকতে পারেন। আরো অদ্ভূত ব্যাপার হলো, সেখানে নারী ও পুরুষ উভয়েই বহু বিবাহ করতে পারেন। একজন পুরুষ যেমন একই পরিবারের কয়েক বোনকে বিয়ে করতে পারেন; তেমনি একজন নারীও একই পরিবারের কয়েক ভাইকে বিয়ে করতে পারেন।
তবে বিদেশিকে বিয়ে করার ব্যাপারে দেশটিতে নিষেধাজ্ঞা আছে। যে কেউ চাইলেই অন্য দেশের নাগরিককে বিয়ে করতে পারবে না। তবে এ নিয়ম রাজার জন্য প্রযোজ্য না। একমাত্র ভূটানের রাজার ক্ষেত্রেই এই নিয়ম মানা হয় না।
ভুটানবাসীদের আরো একটি গুণ হলো, এরা প্রচুর গাছ লাগাতে পছন্দ করেন। মজার বিষয় হলো, এদের রাজা-রানির প্রথম সন্তানের জন্ম জনগণ পালন করে গাছ লাগিয়ে। কেননা, গাছ এদের কাছে দীর্ঘ জীবন, সৌন্দর্য আর সহমর্মিতার প্রতীক।