বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভরপুর রাঙ্গামাটি।

 পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি জেলা রাঙামাটি। এ জেলা শহরের চারপাশে রয়েছে অসংখ্য বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা স্থান। এখানকার জায়গাগুলো বছরের বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন রূপে সাজে। বিশেষ করে বর্ষা আর শরৎকালে রাঙামাটির পর্যটন এলাকাগুলো সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ থাকে।

সাজেক ভ্যালি

রাঙ্গামাটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান হলো সাজেক। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রানী সাজেক। এটি বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত। পাহাড় চূড়ায় অবস্থিত এ মেঘের রাজ্য ইতিমধ্যে দেশি বিদেশি হাজারো পর্যটককে আকর্ষণ করেছে।

রাঙ্গামাটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান সাজেক ভ্যালি

অনেকে সাজেক ভ্যালীকে বাংলাদেশের ভূস্বর্গ বলে থাকেন। আকাশের নীল যেন এখানে এসে দিগন্ত ছুঁয়েছে। চারপাশে যতদূর দৃষ্টি যায়, ছোট-বড় সবুজ পাহাড়। উপর থেকে দৃষ্টি মেললে যেন সবুজ সমুদ্রের ঢেউ। এখানে রুইলুই এবং কংলাক নামে দুইটি পাহাড় আছে। রুইলুই পাহাড় ১৭২০ ফুট উচ্চতায় এবং কংলাক ১৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত।

সাজেক ভ্যালির মূল আকর্ষণ উঁচু-নিচু পাহাড় আর মেঘ। একটি থেকে আরেকটি পাহাড়ের মাঝে যেন আটকে আছে সাদা মেঘের ভেলা। সেখানে রিসোর্টের বারান্দায় বসেই মেঘ-পাহাড়ের মিতালী দেখার সুযোগ মেলে।


সাজেকের পাহাড় চূড়া থেকে পুরো রাঙামাটির চারপাশ দেখা যায় বলে একে রাঙামাটির ছাদও বলেন অনেকে। সাজেকের সর্বোচ্চ চূড়া কংলাক থেকে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখার জন্য পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে।


আরো পড়ুন: বাংলাদেশের সবচেয়ে দর্শনীয় কয়েকটি স্থান।


কাপ্তাই লেক

রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলায় রয়েছে অদ্ভুত সুন্দর কাপ্তাই লেক। কৃত্রিম হলেও এর চারপাশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরে আছে। প্রায় ১১,০০০ হাজার বর্গ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত কৃত্রিম এই হ্রদটি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আয়তনে সবচেয়ে বড় লেক।

কর্ণফুলী নদীর প্রবাহে নির্মিত এই লেককে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে দেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এছাড়া এ লেকের স্বচ্ছ পানিতে নৌকা নিয়ে ভাসতে ভাসতে বহুদূর পর্যন্ত চলে যাওয়া যায়। দু'পাশে পাহাড়ের মাঝ দিয়ে বয়ে চলা এ লেকে দল বেঁধে নৌ বিহার কিংবা প্যাডেল বোটে চড়ে ভ্রমণ করার সুযোগও রয়েছে।


শুভলং ঝর্ণা

রাঙামাটি জেলার সর্বাপেক্ষা আকর্ষণীয় জায়গাগুলোর মধ্যে শুভলং ঝরনা একটি। দুই পাহাড়ের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া লেক দেখে থাইল্যান্ড বলে ভ্রম হতে পারেপাহাড়ের উপর থেকে পাথুরে মাটিতে ঝর্ণাধারা আছড়ে পড়ার অপূর্ব দৃশ্য ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়।


রাঙামাটির শুভলং ঝর্ণা


রাঙামাটির শুভলং ঝর্ণা সৃষ্টিকর্তার এক অপূর্ব সৃষ্টি। রাঙামাটি সদর হতে এর দূরত্ব মাত্র ২৫ কিলোমিটার। পাহাড়ের কোল বেয়ে নেমে আসে এ ঝর্ণা। বর্ষা মৌসুমে মূল ঝর্ণার জলধারা প্রায় ৩০০ ফুট উঁচু থেকে নিচে পড়ে।

শুভলং ঝর্ণার কাছেই রয়েছে প্রায় ২০০০ ফুট উঁচু শুভলং পাহাড়।  যার চূড়ায় রয়েছে একটি টিএন্ডটি টাওয়ার। পাহাড়ে ওঠার জন্য রয়েছে একটি সিঁড়ি। শুভলং পাহাড়ের উপর থেকে দেখলে মনে হয় সমস্ত রাঙামাটি জেলা কাপ্তাই লেকের পানির উপর ভেসে আছে।


রাজবন বিহার

পর্যটকদের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় তীর্থস্থান রাঙামাটির ঐতিহ্যবাহী রাজবন বিহার।এটি মূলত বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বৌদ্ধবিহার হিসেবে পরিচিত। চাকমারা অবশ্য একে কিয়াং বলে থাকেন।

১৯৭৬ সালে রাজবন বিহার প্রতিষ্ঠা করা হয়। রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়ের রাজবাড়ির পাশেই এর অবস্থান। ৩৩ দশমিক ৫ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত বিহার এলাকায় রয়েছে ৪টি মন্দির, ভিক্ষুদের ভাবনা কেন্দ্র,তাবতিংশ স্বর্গ। এছাড়াও আছে বিশ্রামের জন্য ঘর ও হাসপাতাল। 


প্রতিবছর এ রাজবন বিহারে বৌদ্ধদের কঠিন চিবর দান অনুষ্ঠান হয়। সেখানে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে, যা দেশের আর কোন বৌদ্ধধর্মীয় অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি।


ঝুলন্ত সেতু

রাঙামাটির অন্যতম নিদর্শন ঝুলন্ত সেতু। কাপ্তাই হ্রদের উপর অবস্থিত এ সেতুটি বর্তমানে ‘সিম্বল অব রাঙামাটি’ হিসেবে পরিণত হয়েছে।


রাঙামাটির অন্যতম নিদর্শন ঝুলন্ত সেতু

ঝুলন্ত সেতুতে দাঁড়ালেই চোখে পড়ে কাপ্তাই লেকের  জলরাশি। দূরের উঁচু নিচু পাহাড়ের গায়ে বড় বড় সব গাছ। ঝুলন্ত সেতুটির দৈর্ঘ্য ৩৩৫ ফুট, প্রস্ত ৮ ফুট। এর উভয় পাশে টানা তার দিয়ে ঘেরা।

Next Post Previous Post
1 Comments
  • অম্রিতা
    অম্রিতা ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ এ ৯:২০ AM

    ❤️

Add Comment
comment url