তিন চোখের প্রাণী টুয়াটারা
সাধারণত পৃথিবীর বেশিরভাগ প্রাণীরই দুটি চোখ থাকে। ব্যতিক্রম এক চোখা প্রাণীও দেখা যায় কিছু কিছু। তবে অনেকেই হয়তো জানেন না যে, পৃথিবীতে বেঁচে থাকা দীর্ঘায়ু এক প্রাণীর রয়েছে তিনটি চোখ! এ অদ্ভুত প্রাণীটির নাম হলো টুয়াটারা।
টুয়াটারার দৈহিক গঠন
এটি টিকটিকি-গিরগিটির মতোই এক ধরনের প্রাণী। তবে দেখতে বড় আকারের টিকটিকির মতো মনে হলেও এদের শরীরের গঠন টিকটিকির থেকে বেশ আলাদা।
ডাইনোসরের সঙ্গেও কিছুটা মিল আছে এদের। যার কারণে অনেক সময় বিজ্ঞানীরা একে ‘জীবন্ত ডাইনোসর’ নামেও আখ্যায়িত করে থাকেন।
স্বাভাবিক দুইটি চোখের মাঝামাঝি জায়গায় একটি গর্তে থাকে টুয়াটারার তৃতীয় নয়ন। যাকে বলা হয় পিনিয়াল আই। এটি দেখতে অনেকটা পাইন গাছের মোচার মতো।
অবশ্য এ প্রাণীটি তার তৃতীয় চোখ কিভাবে কখন ব্যবহার করে তা বিজ্ঞানীদের কাছে আজও রহস্য। তবে ধারণা করা হয় জন্মের পর ৬ মাস পর্যন্ত বাচ্চা টুয়াটারা এ চোখ দিয়ে দেখতে পায়। তার বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তৃতীয় চোখের ওপরে পর্দা তৈরি হয়ে ঢেকে যায়।
প্রাণীবিদরা আরো মনে করেন টুয়াটারার পূর্বপুরুষেরা পিনিয়াল আই বা তৃতীয় চোখটি দূরবীনের মতো ব্যবহার করতো।
শুধু চোখই নয়, এ প্রাণীটির রয়েছে আরো কিছু বিস্ময়কর বৈশিষ্ট্য। পৃথিবীতে টুয়াটারার অস্তিত্ব প্রথম খুঁজে পাওয়া যায় প্রায় ২০০ মিলিয়ন বছর আগে। সে সময়ের দিকের দৈহিক গঠন আর বর্তমান সময়ের দৈহিক গঠনের বেশ পার্থক্য লক্ষ করা যায়।
এদের গায়ের রঙ কারো গাঢ় বাদামী, কারো ধুসর, কারো বা আবার জলপাই সবুজ। তবে মজার বিষয় হলো গায়ের রং যেমনই হোক না কেন, এরা তা বদল করতে পারে। বয়স্ক টুয়াটারা বছরে একবার আর তরুণরা বছরে তিন থেকে চারবার গায়ের রং পরিবর্তন করে থাকে।
এদের শরীরের গঠন প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবিলা করার জন্য উপযুক্ত। সারাটা দেহ শক্ত দানার মতো আঁশ দিয়ে ঢাকা। পাগুলো ভীষণ শক্ত। হাতের থাবা রেজরের মতো ধারালো হয়ে থাকে। পিঠে সুচালো স্পাইকের সঙ্গে মোটা একটা লেজও থাকে।
এছাড়া পিঠের দিকে কাঁটার মতো বাড়তি অংশ থাকে। সূচালো মাথাওয়ালা এ সরীসৃপ প্রাণীটি সাধারণত প্রায় ১ ফুট থেকে আড়াই ফুট পর্যন্ত দীর্ঘ হয়। আর এদের ওজন ৩০০ গ্রাম থেকে সর্বোচ্চ ১ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
গড় আয়ু
দীর্ঘজীবী এ প্রাণীটির গড় আয়ু ৭৭ বছর। তবে কিছু কিছু টুয়াটারা ১০০ বছর পর্যন্তও বেঁচে থাকে। এমনকি এদের মধ্যে অনেকেই ১১০ বছরের দীর্ঘ জীবনযাপনও করছে।
প্রজনন
টুয়াটারা প্রজননক্ষম হতে প্রায় ২০ বছর সময় লাগে। পুরুষ টুয়াটারাদের একটা ত্রিকোণাকার ঝুঁটির মতো অংশ থাকে, যা দিয়ে এরা অন্য লিঙ্গের টুয়াটারাকে আকর্ষণ করে। স্ত্রী টুয়াটারা গর্ত থেকে কিছু দূরে গিয়ে ৮ থেকে ১৫ টা পর্যন্ত ডিম পাড়ে। ডিম ফোটাতে প্রায় এক বছর লাগে।
বাসস্থান
একমাত্র নিউজিল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জে টুয়াটারা পাওয়া যায়। সেখানে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৩২টি দ্বীপে এদের বাস রয়েছে। নিউজিল্যান্ডে দুই প্রজাতির টুয়াটারা দেখা যায়।
টুয়াটারা খুব লজ্জাশীল আর বিশ্রামশীল প্রাণী। এরা গর্ত খুঁড়ে তার মধ্যে বাস করে। খরগোস, গিনিপিগের মতো সামনের দু’পা দিয়ে গর্ত খোঁড়ে। সারাটা দিন গর্তের মধ্যে ঘুমিয়ে কাটায়।
এরা বিশেষত রাতেই চলাচল করে। সন্ধ্যার অন্ধকার নামলেই বের হয় শিকারের খোঁজে।এদের পছন্দের খাদ্য হলো বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড়, ব্যাঙ, ইঁদুর, পাখির ডিম প্রভৃতি।
শেষ কথা
টুয়াটারা-কে বলা হয় ডাইনোসরের সবচেয়ে কাছের জীবিত বংশধর। তবে অন্যসব জাতভাইয়েরা পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হলেও বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যে আজও এরা টিকে আছে। অদ্ভুত বিরল প্রাণীটি বর্তমানে প্রায় বিলুপ্তির পথে। যদিও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের প্রকৃতি প্রেমীরা প্রাণীটির সংরক্ষণের চেষ্টা করে যাচ্ছেন।